বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
শামিল শাহরোখ তমাল: শওকত হোসেন হিরন শুধু নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরিশালের মানুষের কাছে আস্থা এবং নির্ভরতার প্রতীক হতে পেরেছিলেন।
কথা এবং কাজের মেলবন্ধন তিনি তৈরি করে দেখিয়েছিলেন, মাত্র সাড়ে চার বছরে তিনি একটি মফস্বল শহর কে আমূল পরিবর্তন করে ছিলেন, যেটা আমাদের কাছে ছিল বিস্ময় জাগানিয়া! সত্যিকার অর্থেই তিনি একটি তিলোত্তমা নগরী উপহার দিতে পেরেছিলেন।
যদি আলোকসজ্জার কথা বলি, মেয়র নাইট এর কথা বলি, কিংবা নৌকাবাইচ, দুই লেইনের রাস্তা, এমন অসংখ্য প্রথম এর সাথে নগরবাসীকে পরিচয় করে দিয়েছিলেন শওকত হোসেন হিরন। এমনকি সূর্যোদয়ের পূর্বে নগরের বর্জ্য পরিষ্কার করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
তিনি যেমন উন্নয়নের ধারা তৈরি করেছিলেন,ঠিক তেমনি তিনি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন, রাজনীতির সহবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন। যা বরিশালের রাজনীতিতে অপরিচিত ছিল। তিনি সবাইকে এক করতে পেরেছিলেন এবং অসম্ভব রকমের দৃঢ়চেতা ছিলেন,এই গুণটিই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় নগরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন, এমনকি আমাকেও অনেক বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন! নতুন কি করা যায়, অথবা আর কি করলে স্থানটি আরও সুন্দর করা যায়! আমি যেমন অবাক হয়েছি, তেমনি তার প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়েছি। তিনি সব সময় মানুষের মাঝে থাকতেন, এমনকি তাকে ফোন করে কথা বলা যেত এবং নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় তার সাথে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যেত, কোন ধরনের কাঠ খড় পোহানো ছাড়াই! এটিই ছিল তাঁর নেতৃত্বের অন্যতম গুণ, আর এ কারণেই তিনি জনগণের হিরন হতে পেরেছিলেন। তিনি যে দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, সেই খবর শুনে বরিশালের এমন কোন মানুষ ছিল না যারা ব্যাকুল কিংবা উৎকন্ঠিত হননি। বরিশালের মানুষ তাকে আপন করে দল-মত-নির্বিশেষে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ঠিক যেমনি, তিনি মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন। যার প্রমাণ তার না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পরে তার জানাজায়, দল মত বর্ণ পেশা ছাঁপিয়ে লক্ষ্য মানুষের উপস্থিতি।
হিরন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ১৪ দল গঠন পরবর্তী সময়ে মিছিল-মিটিংয়ের একজন ছাত্র সংগঠক হিসেবে। পরবর্তীতে বিএম কলেজের বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠতা যা আরও দৃঢ় হয়েছিল বিএম কলেজ, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তিনি যে সংগঠন করতেন সেই সংগঠন হয়তো আমি করিনি, কিন্তু তাকে তার গুণাবলীর কারণে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। ঠিক তেমনি, তিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। সিটি নির্বাচনে তিনি হেরে যাবার পরে, তার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল। যে কথাটি আমার এখনও কানে বাজে….তিনি আমাকে “বাম নেতা” বলে সম্বোধন করতেন। তাকে আমি সান্ত্বনা দিতে পারিনি,উল্টো তিনিই আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং বলেছিলেন, হয়তো তার জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে!!
তিনি আমাকে তার বাসায় চা খাওয়া এবং গল্প করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, বাসায় গিয়ে চা খাওয়া আর গল্প করা হয়ে ওঠেনি!! আমাদের কিছু না বুঝতে দিয়েই, তিনি না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন।
আজ তিনি হয়তো শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু বরিশাল নগরীর প্রত্যেকটি স্থানে, তার কর্ম জানান দিচ্ছে…. তিনি ছিলেন, তিনি আছেন, বরিশালের মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে।যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন প্রিয় হিরণ ভাই…. ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখকঃ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বরিশাল মহানগর